বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া ভ্রমণ! বা সেখানে কাজের জন্য যেতে আগ্রহী অনেকেই বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যেতে কত টাকা লাগে, সেটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকেন। রাশিয়ার ভিসার খরচ, সর্বনিম্ন বেতন এবং কাজের ভিসা পাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের এই লেখায়।
যারা রাশিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান, তাদের জন্য আগেভাগে ভিসা সংক্রান্ত খরচ ও প্রস্তুতি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে ভিসা আবেদন বা যাত্রার সময় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা না হয়।
চলুন জেনে নেই বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যাওয়ার খরচ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যাওয়ার মোট খরচ
রাশিয়া যাওয়ার মোট ব্যয় নির্ভর করে ভিসার ধরন, এয়ার টিকিট, দালাল বা এজেন্সি ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের ওপর।
- কাজের ভিসা: ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা (সরকারিভাবে), এবং ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা (বেসরকারিভাবে)।
- ট্যুরিস্ট ভিসা: ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা (সরকারিভাবে), এবং ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা (বেসরকারিভাবে)।
এ খরচের মধ্যে রয়েছে ভিসা ফি, বিমান ভাড়া, আবাসনের প্রাথমিক খরচ এবং মেডিকেল ও ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি।
রাশিয়ার ভিসার মূল্য
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় রাশিয়ার কাজের ভিসার খরচ কিছুটা বেশি হলেও রাশিয়ায় বেতন তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এটি অনেকের জন্য লাভজনক।
- ওয়ার্ক ভিসা: আনুমানিক ৮–১০ লক্ষ টাকা
- ট্যুরিস্ট ভিসা: ৪–৫ লক্ষ টাকা
রাশিয়া ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
রাশিয়া ভিসার আবেদন করতে হলে আপনাকে নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:
- বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদি)
- জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধনের কপি
- ভিসার আবেদন ফর্ম
- মেডিকেল রিপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- চাকরির অফার লেটার (ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে)
এসব কাগজপত্র না থাকলে ভিসা আবেদন বাতিল হতে পারে।
রাশিয়ায় গড় বেতন কত?
রাশিয়ায় একজন সাধারণ কর্মীর মাসিক বেতন ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।কাজের দক্ষতা অনুযায়ী বেতন আরও বেশি হতে পারে।
- সাধারণ শ্রমিক: ৭০,০০০–৮০,০০০ টাকা
- দক্ষ ও আইটি পেশাজীবী: ৯০,০০০–১,০০,০০০ টাকা
রাশিয়ায় কোন চাকরির চাহিদা বেশি?
রাশিয়ায় বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের তালিকা দেওয়া হলো:
- আইটি ও সফটওয়্যার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- মেকানিক
- ইঞ্জিনিয়ার
- গ্রাফিক ডিজাইনার
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট
- নির্মাণ শ্রমিক
- কৃষিকাজ
- গাড়িচালক
- ডেলিভারি সার্ভিস
এছাড়াও শপিং মল, ফুড প্যাকেজিং, ওয়েটার ও শেফ পদেও সুযোগ রয়েছে।
রাশিয়া ওয়ার্ক ভিসা প্রসেসিং টাইম
রাশিয়ার কাজের ভিসা পেতে সাধারণত ২১ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। তবে কোনো জটিলতা থাকলে এই সময় ৩০–৪৫ দিনেও গড়াতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যাওয়ার উপায় (২০২৫)
বর্তমানে রাশিয়া যাওয়ার দুটি মূল পথ রয়েছে:
১. সরকারিভাবে (BOESL)
বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন BOESL এর মাধ্যমে আবেদন করে আপনি স্বল্প খরচে রাশিয়ায় যেতে পারেন।
- BOESL-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চাকরির বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে আবেদন করুন
- স্বচ্ছ ও সুরক্ষিত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়
২. বেসরকারিভাবে (রিক্রটমেন্ট এজেন্সি)
বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে আপনি রাশিয়ায় যেতে পারেন। তারা প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সহায়তা করে।
সতর্কতা: যাচাই-বাছাই না করে কোনো এজেন্সির সাথে চুক্তি করবেন না। প্রতারণার সম্ভাবনা থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নিন।
রাশিয়া যেতে বয়সসীমা
রাশিয়া ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আবেদনকারীর বয়স বিবেচনা করা হয়:
- ট্যুরিস্ট/বিজনেস/ফ্যামিলি ভিসা: ন্যূনতম ১৮ বছর
- ওয়ার্ক ভিসা: ১৯–৩৫ বছর বয়সীদের অগ্রাধিকার
- স্টুডেন্ট ভিসা: ন্যূনতম ১৬ বছর
FAQ’s
প্রশ্ন: রাশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দাম কত?
উত্তর: আনুমানিক ৮–১০ লক্ষ টাকা (সরকারিভাবে), এবং ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত (বেসরকারিভাবে)।
প্রশ্ন: রাশিয়ায় কাজের বেতন কত?
উত্তর: গড়ে ৮০,০০০–৯০,০০০ টাকা, আইটি ও অভিজ্ঞদের জন্য ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্ন: কৃষিকাজে বেতন কত?
উত্তর: ৭০,০০০–৯০,০০০ টাকা।
প্রশ্ন: সর্বনিম্ন বেতন কত?
উত্তর: সাধারণত ৭০,০০০–৮০,০০০ টাকা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যেতে কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণ ফ্লাইটে ১০–১২ ঘণ্টা, বিশেষ ফ্লাইটে ৮ ঘণ্টা।
শেষ কথা
রাশিয়ায় কাজের জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং নিরাপদ মাধ্যম নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি পদ্ধতি সবসময় বেশি নিরাপদ এবং কম ব্যয়বহুল। তাই যারা ২০২৫ সালে রাশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।