ইতালি ভিসা খরচ 2025। যেতে চান স্বপ্নের দেশে

এই লেখায় আপনি জানতে পারবেন ২০২৫ সালে ইতালি ভিসার খরচ এবং বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কেউ যান পড়াশোনা করতে, কেউ ভ্রমণে, আবার কেউ যান কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে।

তবে, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই জানেন না ইতালির কোন ধরনের ভিসা প্রয়োজন, কোন ভিসার জন্য কত খরচ লাগে বা কীভাবে আবেদন করতে হয়। এই লেখায় আমি ২০২৫ সালের আপডেটেড ইতালি ভিসার ধরন, খরচ, আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। আপনি যদি ইতালি যাওয়ার চিন্তা করে থাকেন, তাহলে লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ইতালি ভিসার ধরণসমূহ

ইতালিতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে। সবচেয়ে পরিচিত দুটি ভিসা হচ্ছে: সিজনাল ভিসা এবং ননসিজনাল ভিসা। এছাড়াও রয়েছে স্টুডেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা এবং স্পনসর ভিসা। চলুন প্রতিটি সম্পর্কে জেনে নেই।

. সিজনাল ভিসা:
এই ভিসা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণ, চিকিৎসা বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। যাদের ভিসার মেয়াদ অল্প সময়ের জন্য দরকার, তাদের জন্য এটি উপযুক্ত।

. ননসিজনাল ভিসা:
এই ভিসা মূলত দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য। ইতালিতে স্থায়ী বা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে চাইলে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।

. স্টুডেন্ট ভিসা:
যারা ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চান, তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন  সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বিধিমালা 2025

. ট্যুরিস্ট ভিসা:
এই ভিসা সাধারণত পর্যটকদের জন্য, যার মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিনের মতো হয়ে থাকে।

. স্পনসর ভিসা:
এটি এক ধরনের ওয়ার্ক ভিসা, যেখানে ইতালির কোনও নিয়োগকর্তা একজন বিদেশিকে স্পনসর করে।

ইতালি ভিসা খরচ ২০২৫

ইতালি যাওয়ার মোট খরচ নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করছেন তার উপর। নিচে ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী আনুমানিক খরচ উল্লেখ করা হলো।

সিজনাল ভিসা

  • ভিসা ফি: ৮০–১০০ ইউরো (প্রায় ১০,০০০–১২,০০০ টাকা)
  • এজেন্সি ফি: প্রায় ৫০,০০০–১,০০,০০০ টাকা (যদি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন)
  • বিমান টিকিট: ৮০,০০০–১,৫০,০০০ টাকা
  • অন্যান্য খরচ: ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, হোস্টেল বুকিং, ডকুমেন্ট প্রসেসিং ইত্যাদি মিলিয়ে মোট খরচ ৪–৫ লাখ টাকার মতো হতে পারে।

নন-সিজনাল ভিসা (ওয়ার্ক ভিসা)

  • ভিসা ফি: ১০০–১৫০ ইউরো (প্রায় ১২,০০০–১৮,০০০ টাকা)
  • এজেন্সি ফি: ৫–৮ লাখ টাকা (ভিসা এবং স্পনসরসহ অন্যান্য খরচ)
  • বিমান টিকিট: ৮০,০০০–১,৫০,০০০ টাকা
  • মোট খরচ: আনুমানিক ১১–১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসা

  • ভিসা ফি: ৫০–৮০ ইউরো (প্রায় ৬,০০০–১০,০০০ টাকা)
  • বিশ্ববিদ্যালয় ফি: বছরে ১,০০০–৪,০০০ ইউরো (প্রায় ১.২–৪.৮ লাখ টাকা)
  • থাকা খাওয়া: মাসে আনুমানিক ৫০০–৮০০ ইউরো (প্রায় ৬০,০০০–৯৬,০০০ টাকা)
  • মোট খরচ: প্রথম বছর মোট ৫–৭ লাখ টাকা হতে পারে।

স্পনসর ভিসা

  • ভিসা ফি: ১০০–১৫০ ইউরো
  • এজেন্সি ফি: ৫–৭ লাখ টাকা
  • মোট খরচ: ১০–১২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ইতালি ভিসা আবেদন করার জন্য যা যা প্রয়োজন

ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে বলা হলো:

. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করুন:

  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
  • সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স
  • ভিসার ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত ডকুমেন্ট (যেমন, অফার লেটার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কনফার্মেশন)

. অনলাইনে আবেদন করুন:
ইতালির অফিসিয়াল ভিসা আবেদন ওয়েবসাইট:
 https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/ita/apply-visa

আরও পড়ুন  রয়েল এনফিল্ড! বাংলাদেশে দাম কত ২০২৫ – সর্বশেষ আপডেট

ইতালি ভিসা
ছবি-বিডিহাল.কম ইতালি ভিসা আবেদন

. ইন্টারভিউ:
দূতাবাস বা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে গিয়ে ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে।

. ভিসা ফি পরিশোধ:
ব্যাংক ড্রাফট বা অনলাইন মাধ্যমে ভিসা ফি প্রদান করুন।

. প্রসেসিংয়ের জন্য অপেক্ষা করুন:
ভিসা প্রসেসিং সাধারণত ১৫–৩০ দিন সময় নিতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার উপায়

১. পাসপোর্ট তৈরি করুন
২. সঠিক ভিসার জন্য আবেদন করুন
৩. ভিসা পাওয়ার পর বিমান টিকিট বুক করুন
৪. ইতালিতে থাকার ব্যবস্থা আগে থেকেই নিশ্চিত করুন

ইতালিতে কোন কোন পেশায় বেশি চাহিদা রয়েছে?

  • কৃষিকাজ – ফসল কাটা ও চাষ
  • নির্মাণ খাত – রোড, ভবন ও জাহাজ নির্মাণ
  • হোটেলরেস্টুরেন্ট – ওয়েটার, কিচেন হেলপার
  • অটোমোবাইল ফুড প্রসেসিং – ফ্যাক্টরির কাজ

২০২৫ সালে ইতালি সরকার ঘোষণা করেছে, তারা মোট ৮২,৭০৫ জন বিদেশিকে কাজের জন্য ভিসা দেবে। এর মধ্যে ৪৪,০০০ জন কৃষিকাজের জন্য নির্ধারিত।

স্পনসর ভিসার বিস্তারিত

স্পনসর ভিসা সাধারণত এক বছরের জন্য ইস্যু করা হয় এবং পরবর্তীতে তিন বছর পর্যন্ত নবায়নযোগ্য। আবেদন করার জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হয়। তবে ২০২৫ সালের আবেদন প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।

শেষ কথা

অনেকেই ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু ভুল তথ্য ও দালালের খপ্পরে পড়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন। সঠিক পথে আবেদন করলে এবং যথাযথ ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখলে আপনি নিজের যোগ্যতায় সহজেই ভিসা পেতে পারেন। এই লেখায় ২০২৫ সালের ইতালি ভিসা খরচ, আবেদন পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় দিকগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এটি আপনার বিদেশ যাত্রার পথে একটি কার্যকর গাইড হিসেবে কাজ করবে।

Leave a Comment