সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থা, যা অবসরের পর তাঁদের জীবনযাত্রা সহজ ও নিশ্চিন্ত করে তোলে। ২০২০ সালের পর থেকে সরকার পেনশন ব্যবস্থার পুরোপুরি নতুন কোনো আইন জারি না করলেও, পূর্বের নিয়মগুলোকে আরো সহজবোধ্য ও কার্যকর করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এনেছে।
এই পোস্টে আমরা ২০২৫ সালের হালনাগাদ পেনশন নীতিমালা, পেনশন বিতরণ সম্পর্কিত আইন, চাকরিকাল অনুযায়ী পেনশনের হার এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো-অত্যন্ত সাবলীল ও সহজ ভাষায়, যাতে সবার বোধগম্য হয়।
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বিধিমালা 2025
পেনশন মূলত অবসরপ্রাপ্ত বা মৃত্যুবরণকারী সরকারি কর্মচারীর নিজের কিংবা তাঁর পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রদান করা হয়। ২০২০ সালে জারি করা “সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সরলীকরণ আদেশ, ২০২০” অনুযায়ী, পেনশন বিতরণের পদ্ধতি আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। এই আদেশটি ২০০৯ সালের নিয়মকে প্রতিস্থাপন করেছে, যা এক সময়কার জটিল প্রক্রিয়াকে সরল ও সময়োপযোগী করেছে।
পেনশন বিতরণের আইন
সরকারি পেনশন সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২৭ জানুয়ারি ২০০৯ সালের একটি স্মারকলিপি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তখন এটি ছিল “বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের পেনশন প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া সরলীকরণ” সংক্রান্ত নির্দেশনা।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে এই আদেশটি আধুনিকায়ন করে নতুন “সরলীকরণ আদেশ” জারি করা হয়, যাতে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তাঁর পরিবার সময়মতো পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা সহজে পেতে পারেন।
মনোনয়ন না থাকলে কী হবে?
যদি কোনো সরকারি কর্মচারী জীবিত থাকাকালীন পেনশনভোগী মনোনয়ন না করে যান, তবে মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারকে নিচের নিয়ম অনুসারে পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হবে:
- প্রাপক: স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা-সমান হারে পেনশন, গ্র্যাচুইটি, জিপিএফ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৮ লক্ষ টাকার অনুদান ও যৌথ বীমার টাকা পাবেন।
- অপ্রাপক: পিতা, মাতা, ভাই এবং বোন-এই সুবিধাগুলো পাবেন না।
- শর্ত: পুত্র বা কন্যাদের খরচের দায়িত্ব স্ত্রীর ওপর ন্যস্ত করে তবেই সুবিধাগুলো অনুমোদিত হবে।
চাকরিকাল অনুযায়ী পেনশনের হার (২০২৫)
চাকরির মেয়াদ অনুযায়ী পেনশনের হার পরিবর্তিত হয়। ২০২৫ সালের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ন্যূনতম ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত চাকরির ভিত্তিতে পেনশন প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচের টেবলে বিস্তারিত হার তুলে ধরা হলো:
চাকরিকাল (বছর) | পেনশনের হার (%) | পূর্ববর্তী হার (%) |
৫ | ২১ | – |
৬ | ২৪ | – |
৭ | ২৭ | – |
৮ | ৩০ | – |
৯ | ৩৩ | – |
১০ | ৩৬ | ৩২ |
১১ | ৩৯ | ৩৫ |
১২ | ৪৩ | ৩৮ |
১৩ | ৪৭ | ৪২ |
১৪ | ৫১ | ৪৫ |
১৫ | ৫৪ | ৪৮ |
১৬ | ৫৭ | ৫১ |
১৭ | ৬৩ | ৫৪ |
১৮ | ৬৫ | ৫৮ |
১৯ | ৬৯ | ৬১ |
২০ | ৭২ | ৬৪ |
২১ | ৭৫ | ৬৭ |
২২ | ৭৯ | ৭০ |
২৩ | ৮৩ | ৭৪ |
২৪ | ৮৭ | ৭৭ |
২৫ | ৯০ | ৮০ |
১৫ বছরের চাকরির উদাহরণ
ধরি, রহিম নামের এক সরকারি কর্মচারীর মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। তিনি ১৫ বছর চাকরি করে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার পরিবারের প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:
- মাসিক পেনশন:
১৫,০০০ × ৫৪% = ৮,১০০ টাকা
এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪,০৫০ টাকা মাসিক পেনশন - চক্ষু ভাতা: ১,৫০০ টাকা
- উৎসব ভাতা: বছরে দুইটি উৎসব ভাতা এবং একটি বাংলা নববর্ষ ভাতা
- গ্র্যাচুইটি (এককালীন):
৪,৩২০ × ২৪৫ = ৯,৯২,২৫০ টাকা - অন্যান্য সুবিধা: জিপিএফ জমা ও মৃত্যু ভাতা
সর্বজনীন পেনশন স্কিম
যেসব কর্মচারী সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, তাঁরা সরকারি পেনশন প্রাপ্তির আওতায় থাকেন। তবে কিছু সংস্থায় পেনশন না থাকলেও, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে তারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
এই স্কিমে কর্মচারী ও নিয়োগকর্তা উভয়ে মাসিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখবেন। চাকরির মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী তাঁরা পেনশন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
পেনশনযোগ্য চাকরির ন্যূনতম সময়
আগে পেনশন পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করার শর্ত ছিল। ২০২৫ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, এখন ৫ বছরের চাকরির পরই একজন কর্মচারী পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। তবে, যদি ৫ বছরের কম সময়ের মধ্যে কর্মচারী মারা যান, সেক্ষেত্রে তার পরিবার তিনটি মৌলিক বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ও জিপিএফ জমা গ্রহণ করতে পারবে।
শেষ কথা
সরকারি পেনশন নীতিমালা ২০২৫ সরকারি কর্মচারীদের অবসরের পর একটি নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার পথকে আরও মজবুত করেছে। সরলীকরণ আদেশ, পেনশনের হার বৃদ্ধি এবং সর্বজনীন পেনশন স্কিম-এইসব পরিবর্তন বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মচারীদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
রয়েল এনফিল্ড কোন দেশের কোম্পানি? জানতে পড়ুন
আমরা আশা করছি আমাদের ওয়েবসাইটের এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আপনাদের একটু কাজে আসবে এবং যারা সরকারি চাকরি কর্মচারী ও কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের নিজেদের ও পরিবারের জন্য পেনশন বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।